কল্পনায় বিলাপ
- আল আমীন - দীর্ঘ কবিতা ২৮-০৪-২০২৪

হৃদয়ের প্রেম-সাগরে অথৈ জলের গহিণে,
মানস-প্রহরীর অজান্তে লুকিয়ে আছে
কিছু মণি, কিছু মুক্তা, হিরা-চুণি-পান্না।
তারা রাতের স্বপনে আসে স্বপ্নীল ভোরে শুকতারার ডানায়,
আবার কখনো হাজারো তারকা মাঝে হাসে---
অপরূপ রূপোলী স্বপ্নরাজ্যের রাণী
প্রেম ভরা লাবণ্যে, মাধুর্য্যের কমনীয়তা ভরা-পূর্ণিমার চাঁদ।

স্বপ্নের মাঝে তারা'রা সব আসে
প্রেমের মালা হয়ে, আর চাঁদ---
আসে ফাগুনের রংতুলি নিয়ে।
রাতের হাজার তারা হয় আমার কণ্ঠের হার,
আর পূর্ণিমা চাঁদ --- তার রংতুলি দিয়ে
আমার মনে এঁকে দেয় হাজারো নীল-জোসনার-সাধ।
আবার কখনো ফাগুনের আগুন লাগা প্রেমের
অপরূপ সৌন্দর্য্যময়ী প্রত্যাশার রঙধনু।

কখনো রাত নির্ঘুম,
আমি বসে থাকি বাতায়নপাশে,
দেখি জোস্নায় সফেদ নদী-তরঙ্গিণীর উন্মাতাল হাসি।
তখন তুমি আস,
আসমানী তারার ফুটে থাকা ফুলের মালা নিয়ে---
দূরের চাঁদের সাগর পাড়ি দিয়ে;
তখন তুমি আস--- রূপোলী চাঁদের চটুল হাসি নিয়ে
লাউ-লতিকার ডগার মতো আমার কণ্ঠ লক্ষ্যে।
তোমার এলোচুল অমনি
বাতাসে উড়ে এসে ঢেকে দেয় দৃষ্টি-উদাস আমার দুই চোখ।
আমি বুঝতে পারি তুমি আছো।
তুমি আছো আমার বুকের তেপান্তরে,
বোবা ইশারায় বিনিময় হচ্ছে ভাবের।
কিন্তু--- যখন আমার দুচোখ ভরে তোমাকে দেখবো বলে'
তোমার চুলগুলি সরিয়ে দেই;
আমি দেখতে পাই তখন, তুমি পাশে নেই আমার,
সামনে পড়ে আছে অদৃশ্যমান প্রেমের এক মানসমূর্তি।

কখনো বসে থাকি, আর আনমনে চেয়ে চেয়ে
দেখি স্বজন-ফেরারী নদীর ছল-ছল আঁখী,
দিগন্তে ছুটে চলা মাতাল স্রোত,
শুভ্র-মেঘধবল জলের ছন্দহারা প্রেমোত্তাল ঢেউ।
নদীর বুকে অজানা শিহরণে ফুটে ওঠা একপশলা ফিনকি হাসি।
দূর অজানায়
কখনো ডেকে ওঠে রূপ-পিয়াসী চকোরিনী,
মনে পড়ে যায় তোমার কথা।
চকোরিনীর কান্না যেন তোমার
দূর ঐ কোন অজানা সম্রাজ্য হতে ভেসে আসা হাসি।
এমন সময় দেখি দূর পানে চেয়ে,
মহাশুন্যের মাঝে--- যেন ফুটে আছে
অচেনা কতেক রূপসী অবলা ফুল।
মন যেন কোথায় চলে যায়, আমি ভাবি
মনে হয় তুমি-ই ওই ফুল; এসেছ গোপনে দেখা দেবার লাগি।
কিন্তু! আবারো দেখি কিছু পর
দেখি ফুল নেই সেখানে
বসে আছো সুধু তুমি, মাথা রেখেছ এই বুকে---
কল্পনায় পরীরুপী তুমি নির্বাক চেয়ে,
চেয়ে আছ তুমি আমার মুখে, সজল তোমার চোখ।
মুখে কথা নেই তোমার, নির্বাক হাসির ইশারায়
অবলীলায় বলে যাচ্ছ মনের কথা...
গোলাপী তোমার ওষ্ঠপুটে
অম্লান স্বর্গের কামনা ভেজা হাসি চিকচিক করছে;
সে হাসির মাঝে হাজারো স্বপ্নীল পদ্ম।
আর আমি সুধু বিস্ময়-মাখা মুখে,
আশংকার জালে আবৃত-হৃদয়ে ভাবছি---
মাত্র কিছুক্ষণের জন্যই এসেছিলে তুমি আমার ভূবনে,
এসেছিলে রঙিন ফাগুনের উত্তাল জোয়ারে ভেসে,
ফোটায়ে ছিলে হৃদয়ে প্রত্যাশার অশ্রুভেঁজা এক নীলপদ্ম।
তারপর গেলে তুমি চলে দূরে, অনেক দূরে
যেথায় সুধু তুমিই থাকো আমিহীনা
আর এখানে আমি ডুবি তোমার কল্পনায়।

মহান সৃষ্টিকুশলী বিধাতা---
একই প্রেমের মাধূরিমা জড়ানো স্বর্গের সুধা সাগরে
আমাদেরে দিয়েছেন ঠাই।
তার নিপুণ সৃষ্টি নিদারুণ বৈচিত্রময়তায়
স্বর্ণালী গেলাফে সুখ-দুঃখের পরশে আবৃত।
তারই এক প্রান্তে তোমার আরপ্রান্তে আমার
সুরের জালে মূর্ছিত অবস্থান।

...কিন্তু এ কী! কোথায় তুমি?
কোথায় তোমার সেই হাসোজ্বল পরীমূর্তি!
সামনে আমার পড়ে আছে
স্বপ্নের ধোঁয়াটে রঙমাখা স্মৃতির অশ্রুভেঁজা
তোমার হারানো হাসির উড়ন্ত ডানা থেকে
খ'সে পড়া এক ফেনীল পলক।
আমি হৃদয়ে আঁখীর ভাবময় দৃষ্টি---
নিক্ষেপ করি তার পানে, দেখি
লেখা আছে তা-তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
কত স্তব্ধ স্বপ্নের হারানো অতীত,
ফাগুন দিনের হাসি জড়ানো রক্তিমাভ স্মৃতি।
চোখ থেকে আমার ঝরে পড়ে বিস্মিত-ব্যাথায়
ক'ফোটা কাতর চোখের জল;
গড়িয়ে গড়িয়ে মিশে যায়
বেদনা-ক্লীষ্ট অজানা বিরহী নদীর লহরীত বুকে।

... তুমি শুনতে কি পাও, আমার একাকীত্বের এই নীরব কান্না?
যদি পারো খুঁজে নিও তোমার পাশের কোন নদী থেকে
মনের অজান্তে খ'সে পড়া ক'ফোটা বেয়াড়া জল।
যাতে লেখা আছে--- আমার বুকের গোপন কথা,
নদীর জলে আছে মিশে আমার প্রত্যাশার
স্পন্দন আঁকা বুদ-বুদ ফাটা গোপন চিঠি।
অথবা উঠে বসো তুমি চাঁদের চূড়ায়,
আমি তোমাকে দেখতে পাবো,
তুমিও খুঁজে পাবে--- নিঃসীম বাষ্পায়িত শুন্যতায়
তোমার মদীরা প্রেমের মদে চুর হয়ে থাকা এক মত্ত-হৃদয়ের অধিকারীকে।

না-হয়, তুমি এসো--- ভোরের শুকতারার আড়ালে
খুব গোপনে, সুপ্ত নিশা জেগে ওঠার আগে;
হয়তোবা দেখতে পাবে---
আমার অশ্রু ফুরিয়ে গেছে, হারিয়েছি মুখের কথা;
মৌন-মুখর স্তব্ধ রজনী...
হয়তোবা দেখতে পাবে,
খসখসে কাগজের গায়ে আমার
কলমের বোহেমিয়ান বিচরণ, পাগলের মত
অশ্রুর প্রলাপ দেখে হাত বাড়াবে তুমি থামিয়ে দিতে
আমার কলমের গতায়াত,
বেখেয়ালীর বশে যা---
এলিয়ে পড়ছে কখনো কোন বর্ণের রূপ হয়ে,
ঘুরে ফিরে গান-কবিতার মত স্রোত
অথবা রক্তকান্নায় অজানার পানে বয়ে চলা নদী।...

এভাবে আর কত দিন দিশাহারা রবে প্রিয়া?
আদম-হাওয়ার মত সেই ময়দানে আরাফাত
কোন পথে , জানো কি তুমি তা?
স্রষ্টা মহান, কবে দেখাবেন সেই পথ,
জানো কি?


পাইকপাড়া, ফকিরহাট/১৫-২৪,১০,২০০৮

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।